যোহরের নামাজ কয় রাকাত পড়তে হয় জেনে নিন

যোহরের নামাজ কয় রাকাত এই সমন্ধে জেনে রাখা একজন মুমিন মুসলিমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যোহরের নামাজের আরবী হচ্ছে সালাতুয যোহ্‌র। প্রত্যক মুসলিমের অবশ্য পালনীয় দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অন্যতম। এটি দুপুরের সময় আদায় করতে হয়। 

যোহরের নামাজ কয় রাকাত পড়তে হয় জেনে নিন

আজকের এই পোস্টটি যোহরের নামাজ কয় রাকাত- যোহরের নামাজ কিভাবে পড়তে হয় এই বিষয়গুলো নিয়েই সাজানো হয়েছে। তাই এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ রইল। 

যোহরের নামাজ কয় রাকাত

যোহরের নামাজ সর্বমোট দশ রাকাত। চার রাকাত ফরজ জামায়াতের সাথে আদায় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কেউ শারীরিক সমস্যার কারণে মাঝে মধ্যে জামায়াতে উপস্থিত হতে না পারে। তবে সেক্ষেত্রে সে বাড়ি একাকী নামাজ আদায় করতে পারে। যোহরের ফরজ নামাজের আগে চারকাত নামাজ আদায় করা ও ফরজ নামাজের শেষে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত।

 

এছাড়াও আপনি চাইলে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে যোহরের নামাজের অবশ্যই আপনাকে চার রাকাত ফরজ সালাত অবশ্যই আদায় করতে হবে। হযরত আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সা.) যদি যোহরের পূর্বে চার রাকাত না আদায় করতেন তবে যোহরের (ফরযের) পর তা আদায় করতেন। (তিরমিজি হাদিস নং ৪২৬)। যোহরের সুন্নত নামাজ আদায় না করলে কোন গুনাহ হবে না। তবে তবে অনেকগুলা সাওয়াব হারানো যাচ্ছে। তাই চেষ্টা করতে হবে যোহরের ফরজ নামাজ শেষ সুন্নত নামাজগুলোও আদায় করা। শুক্রবারে যোহ্‌রের নামাজের পরিবর্তে জুম্মার নামায আদায় করা হয়।

যোহরের নামাজের সময়

সূর্য পশ্চিম দিকে ঢললেই যোহরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং বস্তুর নিজস্ব ছায়ার এক গুণ হলে শেষ হয়। বাংলাদেশে সাধারণত দুপুর ১২টায় যোহরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং ১.৩০ মিনিটে যোহরের জাময়াত অনুষ্ঠিত হয়। 

যোহরের নামাজ পড়ার নিয়ম - যোহরের নামাজ কিভাবে পড়তে হয় 

যোহরের নামাজ কিভাবে পড়তে হয় এই সমন্ধে আমাদের সকল মুসলমানের জেনে রাখা প্রয়োজন। তাই যদি আপনিও যোহরের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান তবে আজকের পোস্টের এই অংশটুকু ভালোভাবে মনোযোগ সহকারে পড়ুন। নিচে যোহরের নামাজের নিয়ম উল্লেখ করা হলো- 

অযু- প্রত্যক ফরজ সালাত বা অন্যন্য সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই অযু করতে হবে। কেননা অযু ছাড়া নামাজ আদায় করা যায় না। কারণ অযুর মাধ্যেমে আমরা পাক-পবিত্র হই। তাই নামাজের আগে অবশ্য অযু করতে হবে। যোহরের নামাজের পূর্বে অবশ্যই অযু করতে হবে।

যোহরের নামাজ নিয়ত: যোহরের নামাজ শুরু করার আগে অবশ্যই নিয়ত করা প্রয়োজন। নিয়র এর বাংলা অর্থ হলো সংকল্প করা। যোহরের নামাজের নিয়ত হলো: নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা আরবাআ রাকয়াতি সালাতিজ জোহরি ফারজুল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।” 

তাকবীরে তাহরীমা: অযু করে জোহরের নামায আদায়ের নিয়তে কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে উভয় হাত কাঁধ বরাবর তুলে তাকবীর বলে বুকের সাথে বেঁধে ফেলুন।এ সময় বাম হাতের উপরে ডান হাত কনুই বরাবর রাখতে হবে অথবা বাম কব্জির উপরে ডান কব্জি রেখে বুকের উপর হাত বাঁধতে হবে। এরপর সিজদার স্থানে দৃষ্টি রেখে ছানা পাঠ করতে হবে।

সূরায়ে ফাতিহা পাঠ: ছানা পাঠ করার পর। আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ সহ সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে এবং অন্যান্য রাকাতে আউযুবিল্লাহ বাদে কেবল বিসমিল্লাহ বলে সূরা ফাতিহা পড়বে। জেহরী সালাত হলে সূরায়ে ফাতিহা শেষে সশব্দে আমীন’ বলতে হবে।  

কিরাআত: সূরা ফাতিহা পড়ার পর ইমাম বা একক মুছল্লী প্রথম দুই রাকাতে অন্য কোন সূরা বা কুরআনের কিছু আয়াত তেলাওয়াত করবেন। কিন্তু মুক্তাদী হলে জেহরী সালাতে চুপে চুপে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পড়তে হবে ও ইমাম সাহেবের কিরাআত মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। 

রুকু: কিরাত পড়ার পর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যান। এ সময় উভয় হাত হাঁটুর ওপর রেখে পা, হাত, পিঠ ও মাথা সোজা রাখুন এবং রুকুর দোয়া ‘সুবহা-না রব্বিয়াল আযীম’ কমপক্ষে তিনবার পাঠ করতে হবে। 

ক্বওমা: তারপর রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এ সময় উভয় হাত কিবলার দিকে সোজা রেখে কাঁধ পর্যন্ত উঠাতে হবে এবং ইমাম ও মুক্তাদী সকলে বলবে ‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’ । এরপর কওমার দোয়া ’রব্বানা লাকাল হামদ’ পাঠ করতে হবে। 

সিজদাহ: ক্বওমার দোয়া পাঠ শেষে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে প্রথমে দু’হাত ও পরে দুই হাটু মাটিতে রেখে সিজদায় যাবে ও বেশি বেশি সিজদার দোয়া পড়্তে হবে। সিজদাহের দোয়া হলো সুবহানা রাব্বি আল আলা। এই দোয়াটি কমপক্ষে তিনবার পাঠ করতে হবে।

বৈঠক:দ্বিতীয় রাকাত নামাজ শেষে বৈঠকে বসতে হবে। যদি প্রথম বৈঠক হয়, তবে কেবল ‘আত্তাহিইয়া-তু’ দোয়া পড়ে তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠে যাবে। আর যদি শেষ বৈঠক হয়, তবে ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ার পরে দরুদ শরীফ, দো’আয়ে মাছূরা পাঠ করতে হবে। 

সালাম: দোয়ায়ে মাছুরাহ পাঠ করা হয়ে গেলে প্রথমে ডানে ও পরে বামে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করতে হবে। 

মোনাজাত: সালাত শেষ করার পর আপনি কিছু দোয়া ও ইস্তেগফার পাঠ করতে পারেন। আল্লাহর জিকির করতে পারেন। এছাড়াও আপনি দুনিয়া ও মাগফিরাতে জন্য আল্লাহর নিকট মোনাজাত করতে পারেন। 

যোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত

প্রত্যেক ফরজ নামাজের পূর্বে নিয়ত করা প্রয়োজন। যোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত হলো: 

আরবী উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা আরবাআ রাকয়াতি সালাতিজ জোহরি ফারজুল্লাহি তা'আলা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

বাংলা অর্থঃ  যোহরের নামায চার রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার জন্য কিবলার দিকে মুখ করে আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত করলাম। 

শেষ কথা: যোহরের নামাজ কয় রাকাত পড়তে হয়

প্রত্যক মুসলিম ভাই-বোনের পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এবং আল্লাহর সকল বিধি বিধান-নিষেধ মেনে চলা প্রয়োজন। উপরোক্ত আলোচনায় আজকে আমি আপনারদের সাথে যোহরের নামাজ কয় রাকাত এই সমন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই পোস্টটি যদি আপনাদের কাছে তথ্যবহুল মনে হয় তবে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

বিজ্ঞাপন